স্বদেশ ডেস্ক:
নরম মাটির ঢাকায় প্রচুর বহুতল গড়ে উঠেছে। এই শহরের বিশাল একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে বালু ও কাদামাটি দিয়ে। নিচু অথবা জলাশয় বালু দিয়ে ভরাট করে অনেকেই পাইলিং করে অথবা নামমাত্র ভবন তৈরি করে ফেলছেন। তারা ভাবছেন, পাইলিং করে ভবন তৈরি করলেই মজবুত ও ভূমিকম্প সহনীয় হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু পাইলিং করে ভবন তৈরি করলেই ওই ভবন মজবুত হবে না এবং ভূমিকম্প সহনীয় হবে না, আরো কিছু করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বর্তমান ঢাকা শহরের যে ৩৫ শতাংশ এলাকার মাটি নরম, বালু দিয়ে ভরাট করে ভবন তৈরি করা হয়েছে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হবে না। পাইলিং করার সাথে সাথে আরো কিছু কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যেখানে ভবন উঠবে সেখানকার মাটিকেও শক্ত ও মজবুত করার কাজটি করতে হবে। ড. মেহেদী আহমেদে আনসারী বলেন, নরম মাটিতে পাইলিং করার সাথে সাথে সেখানে ১০ থেকে ১৫ ফুট (মাটি পরীক্ষা করে প্রকৌশলীরা ঠিক করবেন প্রকৃতপক্ষে কতটুকু নিচে সিমেন্ট দিতে হবে) গভীর পর্যন্ত সিমেন্ট দিয়ে মাটিকে শক্ত করতে হবে। এ রকম করা হলে সেখানে গড়ে ওঠা ভবনটি ভূমিকম্পের প্রবল ঝাঁকুনি সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করবে। কারণ পাইলিং করলে ভবনটি হয়তো শক্ত কলামের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু উচ্চ ক্ষমতার ভূমিকম্পে ভবনটি ঝাঁকুনিতে কাঁত হয়ে যেতে পারে। কাঁত হয়ে গেলে ভবনের ওজনের কারণে শেষ পর্যন্ত ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। সিমেন্টের একটি মজবুত ভিত্তি থাকলে এর ভিত্তির কারণে ভবনটিকে ভূমিকম্প বেশি ঝাঁকাতে পারবে না।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ ভবনে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ বাস করে। নরম মাটির ঢাকা শহরে ১৮৯৭ সালের মাত্রার মতো কোনো ভূমিকম্প হলে শক্ত মাটিতে ৮ ও নরম মাটিতে ৯ মাত্রার তীব্রতা হবে বলে বলছেন, ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে ঢাকার প্রায় ২৫ শতাংশ ভবন বিধ্বস্ত হতে পারে। মুহূর্তেই হতাহত হতে পারে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষ। ৬ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক ও বুয়েটের উদ্যোগে পরিচালিত যৌথ একটি গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
ঢাকার ২৫ শতাংশ ভবনই বিল্ডিং না মেনে করা হয়েছে। এই ভবনগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, এই ভবনগুলো যত শিগগিরই সম্ভব চেক করে রেট্রোফিট করে ভূমিকম্প সহনীয় করে তুলতে হবে এবং এগুলো চেক করার দায়িত্ব ভবনের মালিককেই নিতে হবে। তারা নিজের উদ্যোগে ভবনগুলো চেক করে এর নিরাপত্তার সার্টিফিকেট নেবে রাজউক থেকে। এ ব্যাপারে রাজউকের উচিত যত শিগগির সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া। অধ্যাপক আনসারী বলেন, ৫ কাঠার একটি প্লটে তৈরি ভবনগুলোকে চেক করাতে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ভবিষ্যতের প্রাণহানি থেকে ভবনের বসবাসরতদের রক্ষা করা এবং নিজের ভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় করাটা খুব বেশি না। তিনি বলেন, নিজের ভবন নিজে চেক করে রাজউকে জমা দেয়ার পর রাজউক পরে এই ভবনগুলোকে আবার চেক করে দেখবে ভবনগুলো কতটুকু নিরাপদ এবং নিরাপদ হলেই কেবল ভবনটিকে চূড়ান্ত সার্টিফিকেট দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজউকের ড্যাপে বন্যার ঝুঁকিপ্রবণ বলে চিহ্নিত এলাকাগুলোই বেশি ভূমিকম্প প্রবণ। ভবনের ভিত্তি সিমেন্ট দিয়ে শক্ত করা ছাড়াও নরম মাটি ভরাট করতে হবে প্রতি ৬ ইঞ্চি পরপর দুরমুজ করে। বন্যাপ্রবণ অথচ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা সব এলাকা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী তার ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে ড. আনসারী বলেন, নরম জায়গায় ভবন তৈরি করা যেতে পারে। নিচে যেখানটায় শক্ত মাটি আছে সে পর্যন্ত দুরমুজ করে যেতে হবে। সে জন্য সরকারকে রিস্ক সেনসেটিভ এরিয়া কোনটা তা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। মাটির উন্নয়ন ও পাইলিংও বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে।